আমরা পেরেছি, আপনিও পারবেন

Date:

Share post:

বিসিএসে সফলদের গল্প

ইডেন দিয়েছে আত্মবিশ্বাস – মুসলিমা জাহান

মেয়ে মাইশাকে রাতে বলে রেখেছেন, ‘কাল আমি তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাব। টিফিনও মা বানাবে।’ মেয়ে তো মহাখুশি! কিন্তু দেখা গেল, ভোরে ঘুম ভাঙার আগেই ফোন এল, ‘স্যার ঝামেলা হয়ে গেছে।’ মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, টিফিন বানানো—সব বাদ দিয়ে ছুটতে হলো থানায়। পুলিশ কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীনের জীবনে হরহামেশাই এমনটা ঘটে।

বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত তিনি। পাশাপাশি বিএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বও তাঁর। ২০১৫ সালে নিখোঁজ ৯৫ জন নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে তাঁদের পরিবারে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পেশাগত কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শাহানাজ গত বছর পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)। 

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেছিলেন। শাহানাজের ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাননি, ঢাকার বাইরে পড়ালেখা করারও অনুমতি মেলেনি পরিবার থেকে। শেষ পর্যন্ত তিনি ভর্তি হন ইডেন মহিলা কলেজে। বিজ্ঞানের ছাত্রী শাহানাজ। 

বন্ধুরা যেখানে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সেখানে বেশ হতাশা নিয়েই তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু পরে কলেজের পরিবেশে ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা তাঁকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছেন। শাহানাজ বলেন, ‘পারিপার্শ্বিকতা অনেক বড় বিষয়। আমি মনে করি আত্মবিশ্বাস আর লক্ষ্য স্থির থাকলেই সাফল্য আসবেই।’

স্নাতক শেষ করার পরে বিয়ে, স্নাতকোত্তরের আগে কোলজুড়ে আসে সন্তান। কিছুই দমাতে পারেনি অদম্য এই নারীকে। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ২০১২ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। স্বামী মো. মনিরুজ্জামান স্থানীয় একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। শাহানাজ বলেন, স্বামী, মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির সবার সহযোগিতাতেই পেশাজীবনে তিনি সফলতা পেয়েছেন। পরিবারে সবাই তাঁকে আদর করে ‘মণি’ বলে ডাকেন। শাহানাজ কেবল পরিবারের নয়; নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে দেশের মণি হয়ে থাকতে চান।

হাল ছাড়েননি পল্লব – সুমন কুমার দাশ, সিলেট

পল্লব হোম দাস সিলেটের এমসি কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা নাকি তাঁকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না। তাই মনে জেদ চেপে গিয়েছিল—ভালো একটি চাকরি পেতেই হবে। সে লক্ষ্যেই চলছিল কঠোর অধ্যবসায়। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি এখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

পল্লব হোম দাস বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হলো, হেরে যাওয়ার আগেই হারার মানসিকতা। কেবল মানসিকতার কারণেই পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেকে পিছিয়ে পড়েন। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই কাউকে বিনা লড়াইয়ে ওয়াকওভার দেওয়া যাবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বড় কথা নয়, যাঁরা লড়াই করতে জানেন, তাঁরাই সফল হচ্ছেন।’

পল্লবের বাড়ি সুনামগঞ্জের মামুদনগর গ্রামে। বলছিলেন, ‘স্নাতকে আমি তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে পাস করেছি। তাই ভালো কিছু চাকরিতে আবেদনও করতে পারিনি। একসময় ২০১০ সালে পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরি পাই। সে চাকরিটাও ছেড়ে দিই, কারণ তখন একমাস পরেই ছিল ৩০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।’

সেবার তিনি নন-ক্যাডার পদে চাকরি পেয়েছিলেন। ৩১ ও ৩৩তম বিসিএসে অংশ নিয়েছেন, ফলাফল ছিল একই রকম। এর মধ্যে আরও কয়েকটা চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু ক্যাডার হওয়ার আগে পর্যন্ত কোথাও তাঁর মন টিকছিল না। অবশেষে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আর কিছুদিন পরই নতুন চাকরিতে ঢুকব। দেশকে সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করব—এই স্বপ্ন এখন মনে-প্রাণে দেখি।’

এখন তিনি কলেজের শিক্ষক – আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী

‘আমি কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ছি, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি নিজের লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকছি কি না। লক্ষ্য স্থির করে এগোতে পারলে সাফল্য এসে ঠিকই ধরা দেবে।’—এভাবেই বলছিলেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তির সুযোগ পান না। তাঁদের অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করছেন। বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য পাচ্ছেন। এখন বিভিন্ন ক্যাডারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর পদচারণ চোখে পড়ার মতোই।’

মতিউর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মোহনপুর গ্রামে। বাবা মুনসুর রহমান স্কুলশিক্ষক। মা নাদিরা বেগম গৃহিণী। ১৯৯৯ সালে তিনি পুঠিয়ার ধোপাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০২ সালে ধোপাপাড়া মেমোরিয়াল মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন।

সেশনজটের কারণে তাঁর ২০০৬ সালের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষা হয়েছিল ২০০৯ সালে। বিভাগের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম। ২০০৭ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১০ সালে। এ পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণিতে পাস করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় তাঁর অবস্থান ছিল ১৫তম। ২৯তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

মতিউর রহমান সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাসে উপস্থিতি, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা—সব দিক দিয়ে তিনি খুবই ভালো। শিক্ষক হিসেবে এখনও নবীন। দিনে দিনে তিনি আরও দক্ষ হয়ে উঠছেন।’

সূত্রঃ প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

Related articles

Prepositional Phrase কাকে বলে? চেনার উপায়।

যে Phrase বা শব্দ সমষ্টি Preposition এর কাজ করে তাকে Prepositional Phrase বলে। Preposition মূলত: Noun / Noun equivalent...

Gerund কাকে বলে? চেনার উপায় এবং এর ব্যবহার।

বাক্যে যে Verb এর শেষে ing যুক্ত হয়ে যে Verb একই সাথে Verb ও Noun-এর কাজ করে থাকে...

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ০৯ মার্চ

8৬তম বি.সি.এস পরীক্ষা-২০২৩ এর প্রিলিমিনারি টেস্ট (MCQ Type) যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক আগামী ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ, শনিবার সকাল...

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার কৌশল

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান কারও কাছে আগ্রহের বিষয়, কারও-বা ভয়ের কারণ। আগ্রহ বা ভয় যেটাই থাক না কেন...