ভাষা আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ২৪ শে জুলাই, ১৯৪৭ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ভাষা সমস্যা সংক্রান্ত একটি নিবন্ধন প্রকাশ করেছিলেন এখানে তিনি বলেছিলেন বিদেশী ভাষা হিসেবে যদি ইংরেজী ভাষা পরিত্যাজ্য হয় তাহলে বাংলা আমাদের পাকিস্তানি রাস্ট্র ভাষা এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু বিবেচনা করা যেতে পারে।
ডিসেম্বর ১৯৪৭ পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এইখানে প্রথম সরকারী ভাবে সিদ্বান্ত হয় যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্র ভাষা। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৮ পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনই কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাস্ট্রাভাষা করার প্রস্তাব করেন। যদিও প্রস্তাবটি গৃহীত হয় নি।
ঢাকায় মি. জিন্নাহ: ১৯ শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম গভর্ণর মি. জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে এবং ২৪ শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে কার্যন হলে ভাষণ দেন। উভয় ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্রভাষা।
রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠা:
তমদ্দুন মজলিস: ২ রা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র ও শিক্ষকেরা ভাষা আন্দোলনের জন্য একটী ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। এর আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেম। ডেমোক্রেটিক লীগ (Democratic League): সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে জনাব ওলী আহাদ মুসলীম লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ভাষা আন্দোলনের জন্য এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। যুবলীগঃ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকায় বসে যুবলীগ গঠিত হয়।
ছাত্রলীগ: ৪ঠা জানুয়ারী, ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠিত হয়।
আওয়ামী মুসলীম লীগ: ২৩ শে জুন, ১৯৪৯ সালে ঢাকার রোজ গার্ডেনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণীকে সভাপতি করে জনাম শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমান কে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করলে এবং রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্প মুক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পরে মুসলীম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ রাখা হয়।
রাস্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ: ২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র শিক্ষকেরা ভাষা আন্দোলনের জন্য এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। ১১ ই মার্চ কে (১৯৪৯-১৯৫১) ৩ বছর ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় রাস্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ: ১৯৫১ সালের ১১ ই মার্চ রাস্ট্রভাষা হিসেবে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন কে আহবায়ক করে এই পরিষদ গঠিত হয়।
সর্বদলীয় রাস্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ: ৩১ শে জানুয়ারী, ১৯৫২ সালে ঢাকার বার কাউন্সিলে লাইব্রেরী ঘরে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীকে সভাপতি করে এই পরিষদ গঠিত হয়। অতঃপর এই পরিষদ আগামী ২১ শে জানুয়ারী সারা পূর্ব বাংলায় হরতাল আহবান করে।
দুনিয়াকাপানো ৩০ মিনিট: ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সালে ঐদিন বিকাল ৩টা ২০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ভাষা সৈনিক জনাব গাজীউল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ ১০ জন করে অসংখ্য মিছিল বের করার মাধ্যমে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার কর্মসূচী দেন।
প্রথম শহীদ মিনার: রাজশাহী সরকারী কলেজে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল রাতে।
ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনার: ২২ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সালে ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনারের ডিজাইন করেন, “ডাঃ বদরুল আলম” ও “সাঈদ হায়দার”। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সালে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৬ ফুট প্রস্থের শহীদ মিনারটী উদ্ভোদন করে ভাষা সৈনিক শহীদ সফিউর রহমানের পিতা মৌলভী মাহমুদুর রহমান। পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল রাতে শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলেন। আলাউদ্দিন আল আযাদ স্মৃতিমিনার কবিতাটি রচনা করেন।
প্রথম প্রকাশিত কবিতা: “কাঁদতে আসিনি আমি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” – লিখেছেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী একুশের প্রথম সংকলনঃ ১৯৫৩ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারীর নামে প্রথম সংকলন প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশক ছিলেন পুথিঘর লিঃ পক্ষে মুহাম্মদ সুলতান। সম্পাদক ছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান।
পাকিস্তানের সংবিধান: জানুয়ারী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের খসড়া সংবিধান গৃহীত হয় যা ২৩ শে মার্চ, ১৯৫৬ সালে সংবিধান কার্যকর হয়। এই সংবিধানে গভর্ণর জেনারেল পদ পরিবর্তন করে রাস্ট্রপতি পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এই সুবাদে পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা। আইয়ূব খান কে প্রধান সামরিক শাসক করা হয়। ** বাংলাকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয় সংবিধানের ২১৪ নম্বর আর্টিকেলে।
আইয়ূব খান: ৭ ই অক্টোবর, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেন এবং আইয়ূব খানকে প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। ২৭ শে অক্টোবর, ১৯৫৮ সালে আইয়ূব খান ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যূত করে রাস্ট্রপতির ক্ষমতা দখল করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা: ৫ ও ৬ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬ সালে নেজাম-ই-ইসলামী নেতা চৌধুরী মুহাম্মদ আলী বাসভবনে নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিব ৬ দফা দাবী উত্থাপন করেন। ১১ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬ সালে লাহোর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন, “৬ দফা বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ”। ৬ দফার কারণে বঙ্গবন্ধু কে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করা হয়।
স্বাধীনতা পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র মূলক মামলা: ১৯৬৭-৬৮ সালে স্বাধীনতা পরিকল্পনা করা হয়। আমির হোসেন নামে বিমান বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত অফিসার স্বাধীনতা পরিকল্পনার কথা পাকিস্তানী গোয়েন্দার নিকট ফাস করে দেন। ১৮ ই জানুয়ারী, ১৯৬৮ সালে শেখমুজিবুর রহমান কে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেটে গ্রেফতার করা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ ই এপ্রিল, ১৯৬৮ সালে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান ছিলেন পাঞ্জাবী বিচারপতি S. A. Rahman এবং দুজন বাঙ্গালী বিচারক M. Rahim (Sylhet) & M. Hakim (Khulna) ১৯ শে জুন, ১৯৬৮ সালে রাস্ট্র বনাম শেখমুজিব ও অন্যান্য নামে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। এই মামলায় শেখ মুজিবকে আসামী করে করে মোট ৩৫ জনকে আসামী করা হয়।
স্বাক্ষী হিসেবে ২৫১ জন এবং রাজ স্বাক্ষী হিসেবে ১১ জন এবং তদন্ত পুলিশ অফিসার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৫ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে হত্যা করা হয়। ১৮ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হয়। ২০ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২২ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিব সহ অন্যান্যরা মুক্তি পান ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে জনাব তোফায়েল আহমেদ এর প্রস্তাবে জনতার সমর্থনে শেখমুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধী দেওয়া হয় ২৪ শে মার্চ, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যোত্থান হয়।
৭০ ওয়ে নির্বাচন / জাতীয় পরিষদের নির্বাচন: নির্বাচনের তারিখ- ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০
মোট আসন: ৩১৩ টি [নির্বাচিত আসন ৩০০ টি + সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৩ টি]
পূর্ব পাকিস্তান পায় = ১৬৯ টি আসন [১৬২ টি আসন + ৭ টি সংরক্ষিত আসন]
আওয়ামীলীগ জয় লাভ করে = ১৬৭ টি আসন [১৬০ টি আসন + ৭ টি সংরক্ষিত আসন]
প্রাদেশিক নির্বাচন: তারিখ- ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ মোট আসনঃ ৩১০ টি আওয়ামীলীগ ২৯৮ টি