বাংলা ব্যাকরণঃ ণত্ব-ষত্ব বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

Date:

Share post:

বাংলা ব্যাকরণঃ ণত্ব-ষত্ব বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন । শুধু BCS Preparation Bangla এর জন্য নয় বরং সকল Govt Jobs Preparation এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নেণত্ব-ষত্ব বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে ‘ণ’ এর ব্যবহার আছে, কিন্তু খাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে ‘ণ’ – এর ব্যবহার নেই । খাঁটি ও বিদেশি শব্দে সবসময় ‘ন’ ব্যবহৃত হয় । শ, ষ, স -এই তিনটি বর্ণের উচ্চারণ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এদের আলাদা করা খুবই কঠিন। তৎসম বা সংস্কৃত ভাষায় শ, ষ, স -এর পৃথক ব্যবহার আছে কিন্তু খাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে ‘ষ’ না বসে এর পরিবর্তে ‘শ’ ও ‘স’ ব্যবহৃত হয় ।

‘স’ এর ব্যবহারই বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ভাষায় শ, ষ, স – এর প্রয়োগ সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী করা হয় । বানানের শুদ্ধতা তৎসহ অর্থগত বিপর্যয় পরিহারের জন্যে শিক্ষার্থীদের ণত্ব ও ষত্ব সংক্রান্ত নিয়মাবলি মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন । বাংলায় গৃহীত সংস্কৃত শব্দের ক্ষেত্রে ণত্ব ও যত বিধান মেনে চলা অপরিহার্য হলেও সংকৃত থেকে বিবর্তিত তদ্ভব এবং বিদেশী শব্দে এই নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজন নেই ।

ণ-ত্ব বিধান

সংজ্ঞা: যে নিয়ম অনুসারে পদের মধ্যে ব্যবহৃত দন্ত ‘ন, মূর্ধন্য ‘ণ’ তে পরিবর্তন হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে ।

১। ঋ, র, ষ – এ তিনটি বর্ণের পরে মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – ঋণ, ঘৃণা, বর্ণ, ভীষণ, রণ, স্মরণ ইত্যাদি ।

২। ঋ, র, ষ -এ বর্ণগুলোর পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গীয় ও প-বর্গীয় ধ্বনি অথবা ষ, ব, হ থাকলে পরবর্তী দন্ত্য – ন, মূর্ধন্য – ণ হয় । যেমন: কৃপণ, হরিণ, অর্পণ, লক্ষণ, রামায়ণ, পাষাণ, গ্রহণ ইত্যাদি ।

৩। ট – বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে দন্ত্য – ন না হয়ে সব সময় মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন ঘণ্টা, লুষ্ঠন, কাণ্ড, কণ্টক, কণ্ঠ, ভণ্ড ইত্যাদি ।

৪। প্র, পরা, পরি, নির-এ চারটি উপসর্ণের এবং অন্তর শব্দের পরে নদ, নম ধাতুগুলোর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন প্রণাম, প্রণতি, প্রণত, প্রাণ, পরিণতি, প্রণিধান, অপরাহ্ণ, অন্তরীণ ইত্যাদি ।

৫। প্র, পরি ইত্যাদি উপসর্গের পর ‘নি’ উপসর্গের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন – প্রণিপাত, প্রণিধান ।

৬। পর, পার, চান্দ্র, উত্তর, নার-এসবের পরে অয়ন থাকলে ‘ণ’ হয় যেমন- পারায়ণ, নারায়ণ, উত্তরায়ণ, চান্দ্রায়ণ ইত্যাদি ।

৭। নাম বোঝালে “শূর্প, (কুলো) শব্দের পরে ‘নখ’ শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: শূর্পণখা (রাবণের বোন), কিন্তু নাম না বোঝালে দন্ত্য-ন হবে, মূর্ধন্য-ণ হবে না । যেমন শূর্পনখা (যে নারীর নখ শূর্প বা কূলড় মত) ।

৮। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই অনেক সংস্কৃত শব্দে প্রথম থেকেই মূর্ধন্য – ণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে । এগুলোকে বলা হয় স্বতঃ মূর্ধন্য – ণ বা নিত্য মূর্ধন্য – ণ । যেমন : অণু, অণিমা,কণা, গণাদ, কণিকা, কল্যাণ, কিঙ্কিণী, কোণ, কফোণি, গণ, গণক, গণনা, গণিত, গণেশ, গণ্য, গুণ, গুণী, গৌণ, গণিকা, গুণ, চাণক্য, চিক্কণ, তৃণ, নিপুণ, পণ, পণ্য, পাণিনি, পিণাক, পাণি, পুণ্য, ফণা, ফণী, বণিক, বাণ, বাণিজ্য, বীণা, বিপণি, বাণিজ্য, বাণী, বিপণি, বেণী, বেণু, ভণিতা, ভাণ, মণি, মাণিক্য, লবণ, লাবণ্য, শাণ, শোণিত স্থাণু ইত্যাদি ।

ব্যাতিক্রম

১। হন্‌ ধাতুর হ ঘ-এ পরিণত হলে মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : শত্রুঘ্ন, বৃত্রঘ্ন ইত্যাদি।

২। পদের শেষে হসন্ত যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : শ্রীমান, স্বামিন ইত্যাদি

৩। দুটি পদ মিলে একটি শব্দ গঠিত হলে পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলেও দন্ত্য-ন হয়, মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : দুর্নাম (দুর + নাম), দুর্নীতি (দুর + নীতি), পরনিন্দা (পর + নিন্দা), সর্বনাম (সর্ব + নাম), বীরাঙ্গানা (বীর + অঙ্গনা), অগ্রনায়ক (অগ্র + নায়ক), হরিনাম (হরি + নাম)।

৪। ত-বর্গের সঙ্গে যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্বন্য-ণ হয় না । যেমন : গ্রন্থ, বৃন্ত, বৃন্দ ইত্যাদি ।

৫। নশ্‌ ধাতু স, ষ হলে মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : প্রনষ্ট ।

৬। তদ্ভব অর্থাৎ পরিবর্তিত সংকৃত শব্দ দন্ত্য-ন হয়, মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : কান, কাঁকন, সোনা, চুন, পরান ইত্যাদি ।

৭। দেশী শব্দে মূর্ধন্য-ণ হয় না, দন্ত্য-ন হয় । যেমন : ডানা, ডাইনি, টান, টনটন, ঠনকো ইত্যাদি।

৮। বিদেশী শবে মূর্ধন্য-ণ হয় না । যেমন : কোরআন, ইরান, জাপান, লন্ডন, বার্লিন, কর্নেল, ট্রেন, বানার ইত্যাদি ।

৯। বিশেষ কতকগুলো তৎসম শব্দেও মূর্ধন্য -ণ ব্যবহৃত না হয়ে দন্ত্য-ন হয় । যেমন : অর্চনা, অর্জুন, কর্তন, কীর্তন, গর্জন, দর্শন, নর্তন, প্রার্থনা, রসায়ন, নগরায়ন ইত্যাদি

১০। দন্ত্যধ্বনির আগে মূর্ধন্য -ণ ব্যবহৃত হয় না, দন্ত্য-ন হয় । যেমন : অন্ত, অন্ধ, আনন্দ, ইন্ধন, ইন্দ্র, কান্ত, কান্তার, ক্রন্দন, গন্ধ, চন্দন, ছন্দ, তন্দ্রা, দ্বন্দ্ব, নন্দন, পন্থা, বন্ধন, মন্দ, যন্ত্র, রন্ধ্র, শান্ত, সন্তান, সান্ত্বনা, স্কন্ধ, স্পন্দন ইত্যাদি ।

ষ-ত্ব বিধান

যে সব নিয়মে স, ষ-তে এবং ষ, স-তে পরিণত হয়, সেগুলোকে ষ-ত্ব বিধান বলে।

১। ঋ-কার ও র-এর পর ‘ষ’ হয়। যেমন- কৃষক, তৃষ্ণা, বর্ষা, উৎকর্ষ, বৃষ্টি, দৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, বর্ষণ, ঋষি, কৃষ্ণ, উৎকৃষ্ট ইত্যাদি।

২। ট ও ঠ-এর আগে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- কষ্ট, কাষ্ট, ওষ্ঠ, স্পষ্ট, নষ্ট, মিষ্ট, সন্তুষ্ট, ষষ্ঠ, গোষ্ঠী ইত্যাদি।

৩। অ, আ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ আগে থাকলে এবং ক, র বর্ণ আগে থাকলে পরবর্তী দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ হয়। যেমন- আবিষ্কার, ভবিষ্যৎ, বিষ, চক্ষুম্মান, বিষয়, সুষমা, বন্ধুবরেষু চিকীর্ষা ইত্যাদি ।

৪। ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন- অভিষেক, অনুষঙ্গ, প্রতিষেধক, প্রতিষ্ঠান, অনুষ্ঠান, পরিষদ, বিষণ্ণ ইত্যাদি ।

৫। নিঃ দ্ধঃ, বহিঃ – এ শব্দগুলোর পর ক, ল, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থানে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- নিষ্পাপ, বহিষ্কার, নিষ্কাম, দুষ্কর ইত্যাদি ।

৬। কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য – ষ হয় । যেমন- আভাষ, ঊষর, ঊষা, আষাঢ়, অভিলাষ, ঈষৎ, ঈর্ষা, কষায়, কোষ, পাষণ্ড, পাষাণ, যোড়শ, ওষধি, উষধ, সরিষা, মানুষ, ষণ্ড, ভাষণ, ভাষ্য, ভাষা, পোষণ, সুষম, ষটচক্র, ষড়যন্ত্র, শোষণ, ভূষণ, দ্বেষ, কলুষ, রোষ, পৌষ, তোষণ ইত্যাদি ।

ব্যাতিক্রম

চলিত ভাষায় মূর্ধন্য-ষ উচ্চারিত হয় না । তদ্ভব শব্দেও দু-একটি শব্দ ছাড়া মূর্ধন্য-ষ লেখা হয় না । বিদেশী শব্দেরও যেমন উচ্চারণ তেমন বানান। তাই দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ লেখা হয় না ।

১। অ, আ বর্ণের পরে মূর্ধন্য-ষ না হয়ে দন্ত্য-স হয় । যেমন : পুরস্কার, তিরস্কার ইত্যাদি।

২। ই, উ – এর পরে হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দন্ত্য-স অপরিবর্তিত থাকে। সেখানে মূর্ধন্য-ষ হয় না । যেমন- বিস্ময় ইত্যাদি ।

৩। সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স অপরিবর্তিত থাকে, সেখানে মূর্ধন্য-ষ হয় না । যেমন: অগ্নিসাৎ, ভূমিসাৎ, ধুলিসাৎ ইত্যাদি ।

৪।স্ফুট ও স্ফুর ধাতুর দন্ত্য-স অপরিবর্তিত থাকে, সেখানে মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন: পরিস্ফুট, বিস্ফুরিত, বিস্ফোটক, বিস্ফোরক ইত্যাদি ।

৫। দন্ত্য-বর্ণ ত, থ, ন – এর আগে মূর্ধন্য-ষ ব্যবহৃত হয় না, দন্ত্য-স হয় । যেমন: স্থান, স্থিত, স্থির, স্তব, স্তৃতি, স্থল, স্তর, ম্লান, স্নেহ, স্নিগ্ধ, স্ত্রী ইত্যাদি ।

৬। সমাসের পরের পদে দন্ত্য-স অপরিবর্তিত থাকে, সেখানে মূর্ধন্য-ষ হয় না । যেমন: অনুসন্ধান, অভিসন্ধি, অসম, অসার, অসীম ইত্যাদি ।

৭। কতকগুলো তৎসম শব্দে দন্ত্য-স ব্যবহৃত হয়, মূর্ধন্য-ষ হয় না । যেমন: প্রসুপ্ত, ভস্ম, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি ।

৮। কয়েকটি তৎসম শব্দে র এবং ঝ বর্ণের পর তালব্য -শ ব্যবহৃত হয়, মূর্ধন্য-ষ হয় না । যেমন: কৃশ, দর্শণ, দৃশ্য, স্পর্শ ইত্যাদি ।

৯। পূজনীয়াসু, সূচরিতাসু, কল্যাণীয়াসূ ইত্যাদি শব্দের শেবে দন্ত্য-স ব্যবহৃত হয় । কারণ এগুলো স্ত্রীবাচক শব্দ । কিন্ত পুংলিঙ্গবাচক শব্দে মূর্ধন্য-ষ । যেমন: শ্রদ্ধাষ্পদেষু, শ্রীচরণেষু, কল্যাণীয়েযু, ম্নেহভাজণেষু, প্রিয়বরেষু ইত্যাদি ।

১০। বিদেশী শব্দের বানানে মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন: জিনিস তোশক, পোশাক, মশলা ইত্যাদি ।

১১। সাধারণভাবে বিদেশী শব্দের যেমন উচ্চারণ তেমন বানান লেখাই বাঞ্ছনীয় । যেমনঃ

ইংরেজি : স্টেশন, স্টার, স্টার্ট, ইনস্টিটিউশন ইত্যাদি ।

ফার্সি : তক্তপোশ, নালিশ, মালিশ, তামাশা, শাবাশ, ইশারা আফসোস, খোশামোদ ইত্যাদি

আরো দেখুনঃ কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ঃ কারক চেনার সহজ ও শর্টকাট উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

Related articles

Prepositional Phrase কাকে বলে? চেনার উপায়।

যে Phrase বা শব্দ সমষ্টি Preposition এর কাজ করে তাকে Prepositional Phrase বলে। Preposition মূলত: Noun / Noun equivalent...

Gerund কাকে বলে? চেনার উপায় এবং এর ব্যবহার।

বাক্যে যে Verb এর শেষে ing যুক্ত হয়ে যে Verb একই সাথে Verb ও Noun-এর কাজ করে থাকে...

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ০৯ মার্চ

8৬তম বি.সি.এস পরীক্ষা-২০২৩ এর প্রিলিমিনারি টেস্ট (MCQ Type) যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক আগামী ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ, শনিবার সকাল...

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার কৌশল

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান কারও কাছে আগ্রহের বিষয়, কারও-বা ভয়ের কারণ। আগ্রহ বা ভয় যেটাই থাক না কেন...