নিম্নে কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হল এর মাধ্যমে BCS Preparation Bangla এর জন্য আমাদেরকে কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করা সহজ করে দিবে।
বিভক্তিঃ
বিভিন্ন কারক ও সম্মন্ধপদ যে চিহ্ন দ্বারা প্রকাশিত হয় তাকে বিভক্তি বলে। বাক্যস্থিত একটি পদের সাথে অন্য পদের সম্পর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পদের সঙ্গে বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হয়।
বিভক্তির শ্রেণীবিভাগঃ
বিভক্তি দুই প্রকার। যথাঃ ১. শব্দ বিভক্তি ২. ধাতু বিভক্তি।
শব্দ বিভক্তিঃ যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নামপদ গঠন করে, তাদেরকে বলে শব্দ বিভক্তি। যেমনঃ কে, রে, তে, এর ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগঃ ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। বাগানের বেড়া। ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।
ধাতু বিভক্তিঃ যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্যবাচক ক্রিয়াপদের সৃষ্টি করে, তাদেরকে বলা হয় ধাতু বিভক্তি। যেমনঃ এ, অ, ই ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগঃ তুমি পড় ( পড় + অ)। আমি পড়ি ( পড় + ই)। সে পড়ে ( পড় + এ)
বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশলঃ
বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই সব শব্দাংশ গুলোকে বলা হয় বিভক্তি। যেমন- বাবা ছেলে স্কুল নিয়ে যাচ্ছ ।
উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয় নি। শব্দগুলোর মধ্যে কোনো সম্পর্কও সৃষ্টি হয়নি এবং এগুলো কোন অর্থবহ বাক্য হয়ে উঠতে পারেনি। এখন ছেলের সঙ্গে কে বিভক্তি, স্কুল এর সঙ্গে এ বিভক্তি আর যাচ্ছ এর সঙ্গে এন বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে বাবা ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পন্ন হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয় এগুলো প্রত্যেকটি একটি পথ পদ।
শব্দের সঙ্গে বিভক্তিযুক্ত হলে তখন সে গুলোকে বলা হয় পদ। ব্যাকরণের দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোনো পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করা প্রয়োজন না হলেও ধরে নেওয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূন্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে বাবা ও ছেলে শব্দের সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দ দুটির সঙ্গে শূন্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এই শব্দ দুটিও কোন পদ।
মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তি গুলো হলো – শূন্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি। বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার-
বিভক্তির নাম |
বিভক্তি |
---|---|
প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি | ০, অ, রা, গণ |
দ্বিতীয়া বিভক্তি | কে, রে |
তৃতীয়া বিভক্তি | দ্বারা, দিয়া(দিয়ে), কর্তৃক |
চতুর্থী বিভক্তি | কে, রে, নিমিত্ত, জন্য |
পঞ্চমী বিভক্তি | হতে (হইতে), থেকে, চেয়ে |
ষষ্ঠী বিভক্তি | র, এর; |
সপ্তমী বিভক্তি | এ, য়, তে |
*দান, সেবা, ভক্তি অর্থে ‘কে’ অথবা ‘রে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হবে। অর্থাৎ, চতুর্থী বিভক্তি শুধু সম্প্রদান কারকের যুক্ত হয়। নিচের উদাহরণ গুলো লক্ষ্য করুন –
‘ ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও’ – অপাদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
‘ আমাকে একটি কলম দাও’ – কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
‘ ভিক্ষুককে টাকাটি ভিক্ষা দিলাম’ – অপাদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
‘ আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা’ – কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
*বচনভেদে বিভক্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়। তবে কোন বিভক্তির চিহ্নিত করার জন্য উপরের বিভক্তির তালিকাটি মনে রাখলেই চলবে।
*বিভক্তির নাম লেখার সময় কখনও সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা যাবে না অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তিকে কখনোই ২য়া লেখা যাবে না।
কারক:
কারক সংস্কৃত ব্যাকরণ এর একটি পারিভাষিক শব্দ। রামমোহন রায় সংস্কৃত হতে এ পারিভাষিক শব্দ গ্রহণ করেছেন। কারক শব্দের অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। পাণিনির মতে, ‘ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক থাকে তাই হল কারক।’ অর্থাৎ‘বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের যে সম্বন্ধ বা অন্বয়, সংস্কৃত ও বাংলা ব্যাকরণ এ তাকে কারক বলা হয়।’
বাংলায় নির্দিষ্ট কারকে নির্দিষ্ট বিভক্তি নেই, একই কারকে সকল বিভক্তির প্রয়োগ হতে পারে।
কারক নির্ণয় পদ্ধতিঃ
কারক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদটির ভূমিকা সর্বাধিক। সুতরাং ক্রিয়াপদটি কে ধরে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে কাঙ্খিত কারকের নাম পাওয়া যাবে। বিষয়টি নিম্নের চিত্রে প্রদর্শিত হলঃ
১। ক্রিয়াকে কে দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা কর্তৃকারক।
২। ক্রিয়াকে কে, কাকে দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা কর্মকারক।
৩। ক্রিয়াকে কার দ্বারা, কিসে দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা করণ কারক।
৪। ক্রিয়াকে কাকে, কী দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা সম্প্রদান কারক।
৫। ক্রিয়াকে “কোথা থেকে” শব্দ দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা অপাদান কারক।
৬। ক্রিয়াকে কখন, কোথায় দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা অধিকরণ কারক।
বিভক্তির চিহ্ন ধরে কারক নির্ণয় করা প্রায় দুরূহ ব্যাপার। এইজন্য পদের অর্থ অনুসরণ করে এবং অর্থভেদে কারক নির্ণয় করতে হবে।
কর্তৃকারকঃ
যে কোনো ক্রিয়া সম্পাদন করে, সে সেই ক্রিয়ার কর্তা। ক্রিয়াপদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সম্বন্ধ কে ব্যাকরণ এ কর্তৃকারক বলা হয়। অর্থাৎ বাক্যের অন্তর্গত যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদ নিজে কোন ক্রিয়া সম্পাদন করে তাই কর্তৃকারক। যেমনঃ রতনে রতন চেনে। (‘এ’ বা ৭মী বিভক্তি)
কর্তৃকারক এর বৈশিষ্ট্যঃ
ক। কর্তৃকারক প্রকৃতপক্ষে ক্রিয়ার কর্তা।
খ। কর্তৃকারকই বাক্যের মূল উদ্দেশ্য।
গ। কর্তৃকারক কে প্রধানত ‘শূন্য বিভক্তি’ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ‘এ’ (য়), ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়।
কর্মকারকঃ
কর্তা যে ক্রিয়া সম্পাদন করে সেই ক্রিয়ার বিষয়কে বলে কর্ম। সুতরাং কর্তা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাই কর্মকারক। যেমনঃ ‘কামাল শিশিরকে চিনে’ এ বাক্যে প্রশ্নঃ কামাল কাকে চেনে? উত্তরঃ শিশিরকে। এখানে কামালের জানার বিষয় অর্থাৎ কামালের ক্রিয়ার বিষয় হচ্ছে ‘শিশির’। ‘শিশিরকে’ পদটি হচ্ছে কর্মকারক। অর্থাৎ ‘চেনে’ ক্রিয়ার কর্ম।
কর্মকারকের বৈশিষ্ট্যঃ
ক। কর্মকে অবলম্বন করেই ক্রিয়া পূর্ণতা পায়।
খ। কর্মকারক সাধারণত ‘শূন্য বিভক্তি’ এবং ‘কে’, ‘রে’ ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়।
সম্প্রদান কারকঃ
স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দান করাকে সম্প্রদান কারক বলে। সুতরাং যে কারকে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদে কোন কিছু নিঃস্বার্থভাবে দান করা বোঝায়, তাকে সংস্কৃত ব্যাকরণ এ সম্প্রদান কারক বলে। প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণ এ অনুরোধ অর্থ সম্প্রদান কারক হয়। যেমনঃ ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। এখানে ভিক্ষুককে নিঃস্বার্থভাবে দানের কথা বলা হয়েছে।
করণ কারকঃ
কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকেই করণ কারক বলে। সুতরাং বাক্যস্থিত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদে ক্রিয়া-সাধনের উপায়কে করণ কারক বলা হয়। যেমনঃ ছেলেরা ছুরিতে আম কাটে। – ‘কাটে’ ক্রিয়ার কর্তা ‘ছেলেরা’ ছুরির সাহায্যে আম কাটে। অর্থাৎ কাটারুপ ক্রিয়ার প্রধান সহায় বা উপায় ‘ছুরিতে’ করণ কারক।
অপাদান কারকঃ
অপাদান শব্দের অর্থ- কোন কিছু হতে বিচ্যুতি, স্খলন, নিঃসরণ, অপসারণ, উৎপত্তি, গ্রহণ, অর্জন, বিরতি, নিবারণ, শ্রবণ ইত্যাদি। ‘যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ এ কোন ব্যক্তি বা বস্তুর পতিত, ভীত, গৃহীত, রক্ষিত, উৎপন্ন, বিরত ইত্যাদি অর্থ নির্দেশ করে, তাকে অপাদান কারক বলা হয়’। বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদটিকে ‘কোথা থেকে’ ‘কি থেকে’ বা ‘কীসের থেকে’ ইত্যাদি প্রশ্ন করলে তার উত্তরে অপাদান পদ কে পাওয়া যায়। যেমনঃ ‘তিলে তৈল হয়’। প্রশ্নঃ কি হতে তৈরি হয়। উত্তরঃ ‘তিলে” (তিল হতে)। ‘তিলে’ অপাদান কারক।
অধিকরণ কারকঃ
ক্রিয়ার ‘ আধার’ বা স্থান, কাল, বিষয়কে বলে অধিকরণ কারক। সুতরাং বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদে ক্রিয়ার কোন আধার কে বোঝায় , সংস্কৃত ও বাংলা ব্যাকরণ এ তাকে অধিকরণ কারক বলে। যেমনঃ লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার! এ বাক্যে ‘ রাত্রি’ বা ‘ নিশীথে’ পদ্ ক্রিয়ার কাল কে বোঝানো হয়েছে।
অধিকরণ কারক এর বৈশিষ্ট্যঃ
ক। ক্রিয়াপদটিকে ‘ কোথায়?’ ‘ কখন?’ ‘ কোন বিষয়ে?’ ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই অধিকরণ কারক।
খ। অধিকরণ কারকে ‘এ’, ‘তে’, ‘এতে’ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ বিলে জল থৈ থৈ করছে।
অধিকরণ কারকের শ্রেণীবিভাগঃতিন প্রকার আধার অনুযায়ী অধিকরণ কারক কত প্রকার। ১। স্থানাধিকরণ বা দেশাধিকরণ, ২। কালাধিকরণ ও ৩। বিষয়াধিকরণ। এছাড়া ‘ভাবাধিকরণ’ নামেও অধিকরণ কারক আছে।
আরো দেখুনঃ বাংলা ব্যাকরণঃ ণত্ব-ষত্ব বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন