বিসিএস প্রস্তুতিঃ ভাষা ও বাংলা ভাষা এই টপিকটি BCS Preparation এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও Govt Jobs সহ সকল চাকরির পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা ও বাংলা ভাষাঃ
আমরা মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা ব্যবহার করে থাকি। ভাষার জন্য অর্থবহ শব্দ অপরিহার্য । মনের ভাব প্রকাশের প্রধান বাহন্ হল ভাষা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান ৭ম। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা ভাষা বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা । বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপিয়ান মুল ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে ইন্দো-ইউরোপিয়ান মুল ভাষার কাল বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। কথ্য ও লেখ্য ভাষা বাংলা ভাষার প্রধান দুটি রূপ। লেখ্য ভাষার রূপ দুটি হল সাধু ও চলিত । সাধু ভাষা হল কৃত্তিম ভাষা। সাধু রীতিতে তৎসম জাতীয় শব্দের প্রাধান্য থাকে। সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য হল গুরুগম্ভীর।
পূর্ণ ক্রিয়াপদ সাধুরীতি ভাষাতে বিদ্যমান থাকে। আর চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য হল পরিবর্তনশীল। বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতির প্রবর্তন করেন প্রথম চৌধুরী। কলকাতা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চলিত ভাষারীতি গড়ে উঠে। চর্যাপদ হল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হল বাংলা ভাষার মধ্যযুগের আদি নিদর্শন। বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণকীর্তন লিখেছেন। ১২০১-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ সময়কে বাংলা ভাষার অন্ধকার যুগ বলা হয়। শাহ মুহম্মদ সগীর, দৌলদ কাজী মধ্যযুগের কবি। পদ্মাবতী লিখেছেন আলাওল।
বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ঃ
প্রাচীন যুগ (৯০০/১০০০ – ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ)-
খ্রিস্টীয় দশম দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালে মাগধী প্রাকৃত ও পালির মতো পূর্ব মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ থেকে বাংলা ও অন্যান্য পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে। এই অঞ্চলে কথ্য ভাষা প্রথম সহস্রাব্দে মাগধী প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী ভাষায় বিবর্তিত হয়। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর শুরুতে উত্তর ভারতের অন্যান্য প্রাকৃত ভাষার মতোই মাগধী প্রাকৃত থেকে অপভ্রংশ ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে। পূর্বী অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ নামক পূর্ব উপমহাদেশের স্থানীয় অপভ্রংশ ভাষাগুলি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় বিবর্তিত হয়, যা মূলতঃ ওড়িয়া ভাষা, বাংলা-অসমীয়া ও বিহারী ভাষাসমূহের জন্ম দেয়। কোনো কোনো ভাষাবিদ ৫০০ খ্রিষ্টাব্দে এই তিন ভাষার জন্ম বলে মনে করলেও এই ভাষাটি তখন পর্যন্ত কোনো সুস্থির রূপ ধারণ করেনি; সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষিক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল। যেমন, ধারণা করা হয়, আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে মাগধী অপভ্রংশ থেকে অবহট্ঠের উদ্ভব ঘটে, যা প্রাক-বাংলা ভাষাগুলির সঙ্গে কিছু সময় ধরে সহাবস্থান করছিল। চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল। সংস্কৃত থেকে যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যোগ করা হয়, তাদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়। চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এই সময় আমি, তুমি ইত্যাদি সর্বনাম এবং –ইলা, –ইবা, ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব ঘটে।
মধ্যযুগ (১৪০০–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)-
এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। শব্দের শেষে “অ” ধ্বনির বিলোপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফার্সি ভাষার প্রভাব এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন।
বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। ফার্সির পাশাপাশি বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এবং ব্যাপক হারে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রত্ন বাংলা ছিলো পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা।
আধুনিক (১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে-বর্তমান)-
এই সময় ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল । ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ সহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের শব্দ স্থান পেয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ খ্রিস্টান পুরোহিত ও ধর্মপ্রচারক ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও সর্বপ্রথম ভোকাবোলারিও এম ইডিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিডো এম দুয়াস পার্তেস (পর্তুগিজ: Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes) নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদ আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ (ইংরেজি: A Grammar of the Bengal Language) নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যেখানে ছাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে গ্র্যামার অফ্ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ্ (ইংরেজি: Grammar of the Bengali Language) নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। বাংলা গদ্য আধুনিক যুগের ভাষার নিদর্শন।
প্রকারভেদঃ দুই প্রকার – মৌখিক ভাষা ও লিখিত ভাষা ।
ভাষার লিখন ব্যবস্থা প্রধানত তিন প্রকার– বর্ণভিত্তিক, অক্ষরভিত্তিক এবং ভাবাত্মক।
বর্ণভিত্তিক(Alphabetic): বাংলা, ইংরেজি, রুশ, হিন্দি, তামিল এবং আরো অনেক ভাষার লিখন পদ্ধতি হল বর্ণভিত্তিক।
অক্ষরভিত্তিক (Syllabic): জাপানি ভাষার লিখন পদ্ধতি হল অক্ষরভিত্তিক।
ভাবাত্মক(Idiographic): বিশ্বের অনেক ভাষার লিখন পদ্ধতিতে বর্ণ ও অক্ষর কোনটিই ব্যবহার করা হয় না। অনেকটা ছবি এঁকে এসব ভাষা লেখা হয়। চীনা ও কোরীয় ভাষা এ পদ্ধতিতে লেখা হয়।
ভাষার প্রধান উপাদান চারটি- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও বাগর্থ(Semantics)।