বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

Date:

Share post:

বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

ধ্বনি কথাটির অর্থ হচ্ছে যে কোনো প্রকার শব্দ বা আওয়াজ। ভাষার মূল অবলম্বন ধ্বনি । ভাষা কতগুলো ধ্বনির সমষ্টিমাত্র । কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দগুলো ভাঙলে কতগুলো ক্ষুদ্রতর অংশ পাওয়া যায় । এগুলোই হলো ধ্বনি। বিভিন্ন ধ্বনির সমন্বয়ে এক একটা অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি হয়, আর এসব অর্থবোধক শব্দকে একটা বিশেষ নিয়মে জুড়ে দিয়ে মানুষ একে অন্যের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করে । এই ধ্বনিই হলো ভাষার ক্ষুদ্রতম একক। বাগযন্ত্রকে ধ্বনি তৈরির কারখানা বলা হয় । দৈনন্দিন নানা কাজে আমাদের বাগধন্ত্র নানা রকম ধ্বনি সৃষ্টি করে থাকে ।

ধ্বনির প্রকারভেদ : বাংলা ভাষার উচ্চারণভেদে ধ্বনি দু’প্রকার। যথা –

১. স্বরধ্বনি ও ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।

স্বরধ্বনি : ফুসফুস থেকে কণ্ঠনালী পথে মুখবিবরের দিকে বাতাস ছেড়ে দিয়ে আমরা ধ্বনি উচ্চারণ করে থাকি । ধ্বনিগুলির মধ্যে যেগুলির ক্ষেত্রে বাতাস মুখবিবরের কোন জায়গায় বাধা পায় না, সেগুলিকে বলে স্বরধ্বনি । যেমন : অ, আ, ই, এ, ও ইত্যাদি ।

ব্যঞ্জনধ্বনি : ধ্বনিগুলির মধ্যে যেগুলির ক্ষেত্রে বাতাস মুখবিবরের কোথাও-না-কোথাও বাধা পায় সেগুলিকে বলে ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন :ক, চ, ট, ত, প ইত্যাদি ।

বর্ণ:

যে ধ্বনি কানে শোনা যায়, তাকে নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে, প্রত্যক্ষ বস্তু রূপে চোখের সামনে তুলে ধরা হয়। প্রত্যেকটি ধ্বনি এককের জন্য এক একটি সাংকেতিক চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করা হয়, ধ্বনি নির্দেশক এসব চিহৃকে বর্ণ বলে।

বর্ণমালার প্রকারভেদ : অ, আ, ই, ঈ, ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি সবগুলোই বাংলা ভাষায় বর্ণ। মানুষের বাগযন্ত্র দ্বারা উচ্চারিত সব ধ্বনি একরকম নয়, কোনো কোনো ধ্বনির উচ্চারণ সহজবোধ্য, আবার কোনো কোনো ধ্বনির উচ্চারণ সহজসাধ্য নয়। এ কারণে বালা বর্ণমালাকে দু ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ

স্বরবর্ণ : যে সকল বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হয়, সেগুলোকে স্বরবর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণের সংখ্যা ১১টি।

উচ্চারণের তারতম্য অনুযায়ী স্বরবর্ণগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (ক) হ্রস্বস্বর ও (খ) দীর্ঘস্বর।

হ্রস্বস্বর: যে সব বর্ণ উচ্চারণ করতে অল্প সময় লাগে সেগুলোকে হ্রস্বস্বর বলে । অ, ই, উ, ঋ – এ চারটি হ্রস্বস্বর বর্ণ।

দীর্ঘস্বর : যে সব স্বরবর্ণ উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে সেগুলোকে দীর্ঘস্বর বলে। আ, ঈ, উ, এ, ঐ, ও, ঔ – এ সাতটি দীর্ঘস্বর বর্ণ।

আবার গঠন বা উচ্চারণ অনুযায়ী স্বরবর্ণগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) মৌলিক স্বর ও (খ ) যৌগিক স্বর ।

মৌলিক স্বর : যে সব স্বরবর্ণ বিশ্লেষণযোগ্য নয়, অর্থাৎ যারা একক ঘরে অধিকারী তাদেরকে মৌলিক ঘর বলে। অ, আ, ই, উ, এ, ও – এ ছয়টি বর্ণ মৌলিক স্বর।

যৌগিক স্বর : যে সব স্বরবর্ণ বিশ্রেষণযোগ্য, অর্থাৎ যারা একাধিক মৌলিক স্বরযোগে গঠিত, তাদেরকে যৌগিক স্বর বলে। ঐ, ঔ – এ দুটি স্বরবর্ণ যৌগিক স্বর। ঐ = ও+ই, ঔ = ও+উ

ব্যঞ্জনবর্ণ

সংজ্ঞা: যে বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না, তাদেরকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে যেমন: ক বর্ণটি উচ্চারণ করতে হলে শেষে একটি অ আসে।

ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।

উচ্চারণ অনুসারে ব্যঞ্জনধবনি বা ব্যঞ্জনবর্ণসমূহ

স্পর্শ বর্ণ : বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ক থেকে ম পর্যন্ত পচিশটি বর্ণকে স্পর্শ বর্ণ বলে। এ বর্ণগুলো উদ্চারণকালে জিহ্বা ও মুখের কোন না কোনও অংশকে স্পর্শ করে। এ স্পর্শ বর্ণগুলোকে আবার পাঁচভাগে ভাগ করা হয়। এর এক একটি ভাগকে বর্গ বলে। বর্গের প্রথম অক্ষর অনুযায়ী এদের নাম করা হয়। যেমন –

ক, খ, গ, ঘ, ঙ – এই পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণের সময় কণ্ঠের সাহায্য প্রয়োজন হয়, তাই এগুলোকে বলা হয় কন্ঠ্যবর্ণ।

চ, ছ, জ, ঝ, ঞ – এই পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বা তালুকে স্পর্শ করে, তাই এদের বলা হয় তালব্যবর্ণ।

ট, ঠ, ড, ঢ, ণ – এই পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বা তালুর উপরের অংশ মূর্ধাকে স্পর্শ করে, তাই এদের বলা হয় মূর্ধন্য বর্ণ।

ত, থ, দ, ধ, ন – এই পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বা দন্তকে স্পর্শ করে, তাই এদের বলা হয় দন্ত্যবর্ণ।

প, ফ, ব, ভ, ম – এই পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণের সময়ে জিহ্বা দুটি ঠোট বা ওষ্ঠের সাহায্য অনুভব করে, তাই এদের বলা হয় ওষ্ঠবর্ণ।

বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

এ পঁচিশটি বর্ণকে বর্গীয় বর্ণ বলে। আর বাকিগুলো অবর্গীয় বর্ণ।

অল্পপ্রাণ বর্ণ : বর্গের প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম বর্ণের উচ্চারণে নিঃশ্বাসের জোর কম থাকে বলে এগুলোর উচ্চারণ কোমল হয়, তাই এগুলোকে অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন – ক, গ, ঙ/চ, জ, ঞ, ট, ড, ণ এবং প, ব,ম।

মহাপ্রাণ বর্ণ : বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণের উচ্চারণে নিঃশ্বাসের জোর বেশি থাকে বলে এগুলোকে মহাপ্রাণ বর্ণ বলে । যথা – খ, ঘ, চ,ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ এবং ফ,ভ ।

উষ্ম বর্ণ: যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর নিশ্বাস অনেকক্ষণ তাদেরকে উষ্ম বর্ণ বলে । এগুলো উচ্চারণের সময় শিসধ্বনি হয় বলে, এগুলোকে শিসধ্বনিও বলে। যেমন: শ, ষ, স এবং হ ।

অন্তঃস্থ বর্ণ: যে সকল বর্ণ স্পর্শ বর্ণ ও উষ্ম বর্ণের মধ্যে অবস্থিত সেগুলোকে অন্তঃস্থ বর্ণ বলে। যেমন – য, র, ল, ব ।

আনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ: যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় মুখ বিবরের বায়ু মুখ দিয়ে বের না হলে নাক দিয়ে বের হয়, তাদেরকে নাসিক্য বর্ণ বলে। নাসিক বর্ণকে আনুনাসিক বর্ণও বলা হয়ে থাকে। যেমন: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম – এ পাঁচটি নাসিক্য বর্ণ।

ঘোষ বর্ণ : বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, ও পঞ্চম বর্ণের উচ্চারণে গাম্ভীর্য পূর্ণ বলে এগুলোকে ঘোষ বর্ণ বলে । যেমন – গ, ঘ, ঙ, জ, ঝ, ঞ, ড, ঢ, ণ, দ, ধ, ন, এবং ব, ভ, ম ইত্যাদি।

অঘোষ বর্ণ : বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের উচ্চারণ মৃদু হয় বলে এগুলোকে অঘোষ বর্ণ বলে । যেমন  : ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ ইত্যাদি ।

বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

তাড়নজাত বর্ণ : ড়, ঢ় বর্ণ দুটি জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টিয়ে এবৎ মূর্ধা স্পর্শ করে জিহ্বার নিম্নভাগ দিয়ে দন্তমূলে আঘাত বা তাড়নের মাধ্যমে উচ্চারিত হয় বলে এদেরকে তাড়নজাত বর্ণ বলে।

অযোগবাহ বর্ণ : স্বর ও ব্যঞ্জনের সাথে যোগ নেই বলে অনুস্বার (ং) বিসর্গ (ঃ) এই বর্ণ দুটিকে অযোগবাহ বর্ণ ।

ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ স্থান অনুসারে তাদের নাম:

বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

>বর্ণের মাত্রা

বাংলা ব্যাকরণঃ ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

5 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

Related articles

Prepositional Phrase কাকে বলে? চেনার উপায়।

যে Phrase বা শব্দ সমষ্টি Preposition এর কাজ করে তাকে Prepositional Phrase বলে। Preposition মূলত: Noun / Noun equivalent...

Gerund কাকে বলে? চেনার উপায় এবং এর ব্যবহার।

বাক্যে যে Verb এর শেষে ing যুক্ত হয়ে যে Verb একই সাথে Verb ও Noun-এর কাজ করে থাকে...

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ০৯ মার্চ

8৬তম বি.সি.এস পরীক্ষা-২০২৩ এর প্রিলিমিনারি টেস্ট (MCQ Type) যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক আগামী ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ, শনিবার সকাল...

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার কৌশল

বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান কারও কাছে আগ্রহের বিষয়, কারও-বা ভয়ের কারণ। আগ্রহ বা ভয় যেটাই থাক না কেন...